৩.১ সন্ধি
৩.২ বিসর্গ সন্ধি
৩.৩ কর্ম-অনুশীলন
মানুষ কথা বলার সময় কথার গতি বৃদ্ধি পায়। দ্রুত কথা বলার সময় কখনো কখনো দুটো শব্দের কাছাকাছি থাকা দুটো ধ্বনির উচ্চারণ একত্রিত হয়ে যায়। ব্যাকরণে একে সন্ধি বলা হয়। যেমন: ‘আমি বিদ্যা আলয়ে যাব।” বাক্যটি বলার সময় ‘আমি বিদ্যালয়ে যাব' হয়ে যায়। এখানে ‘বিদ্যা’- '-এর 'আ'-ধ্বনি এবং ‘আলয়’-এর ‘আ’–ধ্বনি মিলে গেছে। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ লিখেছেন : দুটি বর্ণ অত্যন্ত নিকটবর্তী হলে উচ্চারণের সুবিধার জন্য উভয়ের মিলন হয়ে এক বর্ণ বা একের রূপান্তর বা একের লোপ বা উভয়ের রূপান্তর হলে— এরূপ মিলনকে
সন্ধি বলে৷
এই সংজ্ঞার আলোকে বলা চলে : পাশাপাশি অবস্থিত দুটো ধ্বনির মিলনের ফলে যদি এক ধ্বনি সৃষ্টি হয়, তবে তাকে সন্ধি বলে।
সন্ধি শব্দের অর্থ মিলন। দুটো ধ্বনির সন্ধিতে প্রথম শব্দের শেষ ধ্বনি এবং পরের শব্দের প্রথম ধ্বনির মিলন ঘটে। সন্ধির ফলে নতুন নতুন শব্দের সৃষ্টি হয়। কথা বলার সময় শব্দের উচ্চারণ সহজ হয়। ভাষা সংক্ষিপ্ত হয় এবং শুনতে ভালো লাগে৷
সন্ধিতে ধ্বনির চার ধরনের মিলন হয় :
১. উভয় ধ্বনি মিলে একটি ধ্বনি হয়।
২. একটি ধ্বনি বদলে যায় ।
৩. একটি ধ্বনি লোপ পায় ।
৪. উভয় ধ্বনির বদলে নতুন ধ্বনির সৃষ্টি হয়।
১. স্বরসন্ধি : স্বরধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনির মিলনে যে সন্ধি হয়, তাকে স্বরসন্ধি বলে। যেমন :
সোনা + আলি = সোনালি রুপা + আলি = রুপালি
মিথ্যা + উক = মিথ্যুক কুড়ি + এক = কুড়িক
নদী + এর = নদীর মা + এর = মায়ের
২. ব্যঞ্জনসন্ধি : স্বরধ্বনির সঙ্গে ব্যঞ্জনধ্বনি কিংবা ব্যঞ্জনধ্বনির সঙ্গে ব্যঞ্জনধ্বনি মিলিত হয়ে যে
সন্ধি হয়, তাকে ব্যঞ্জনসন্ধি বলে। যেমন :
কাঁচা + কলা = কাঁচকলা নাতি + বৌ = নাতবৌ
ছোট + দা = ছোড়দা উৎ + চারণ = উচ্চারণ
আর + না = আন্না চার + টি = চাট্টি
বাংলা ভাষায় অনেক সংস্কৃত শব্দ কোনো রকম পরিবর্তন ছাড়া ব্যবহৃত হয়। এগুলোকে তৎসম শব্দ বলে। এসব তৎসম শব্দের সন্ধি সংস্কৃতের নিয়মেই হয়। তাই সংস্কৃতের নিয়ম মেনে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত তৎসম শব্দের সন্ধি ৩ প্রকার। যথা : ক. স্বরসন্ধি, খ. ব্যঞ্জনসন্ধি ও ৩. বিসর্গসন্ধি
১. অ, আ ধ্বনির সন্ধি
সূত্র | উদাহরণ | |
---|---|---|
অ + অ = আ ( া ) | নব + অন্ন = নবান্ন | পরম + অণু = পরমাণু |
অ + আ = আ ( া ) | জল + আশয় = জলাশয় | পাঠ + আগার = পাঠাগার |
আ + অ = আ ( া ) | কথা + অমৃত = কথামৃত | আশা + অতীত = আশাতীত |
আ + আ = আ ( া ) | বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয় | মহা + আশয় = মহাশয় |
২. ই, ঈ ধ্বনির সন্ধি
সূত্র | উদাহরণ | |
---|---|---|
ই + ই = ঈ (ী) | অতি + ইত = অতীত | রবি + ইন্দ্র = রবীন্দ্র |
ই + ঈ = ঈ (ী ) | পরি + ঈক্ষা = পরীক্ষা | অধি + ঈশ্বর = অধীশ্বর |
ঈ + ই = ঈ (ী ) | শচী + ইন্দ্ৰ = শচীন্দ্র | মহী + ইন্দ্ৰ = মহীন্দ্র |
ঈ + ঈ = ঈ (ী) | শ্রী + ঈশ = শ্রীশ | পৃথিবী + ঈশ্বর = পৃথিবীশ্বর |
৩. উ, ঊ ধ্বনির সন্ধি
সূত্র | উদাহরণ | |
---|---|---|
উ + উ = ঊ (ু) | কটূ + উক্তি = কটূক্তি | মরু + উদ্যান = মরূদ্যান |
উ + ঊ = উ ( ু) | লঘু + ঊর্মি = লঘূর্মি | বহু + ঊর্ধ্ব = বহূর্ধ্ব |
ঊ + উ = ঊ (ূ) | বধূ + উৎসব = বধূৎসব | বধূ + উক্তি = বধূক্তি |
উ ঊ = ঊ (ূ) | ভূ + ঊর্ধ্ব = ভূর্ধ্ব |
৪. অ/আ, ই/ঈ ধ্বনির সন্ধি
সূত্র | উদাহরণ | |
---|---|---|
অ/আ + ই/ঈ = এ (ে) | স্ব + ইচ্ছা = স্বেচ্ছা | যথা + ইষ্ট = যথেষ্ট |
অপ + ঈক্ষা = অপেক্ষা | মহা + ঈশ্বর = মহেশ্বর |
৫. অ/আ, উ/উ ধ্বনির সন্ধি
সূত্র | উদাহরণ | |
---|---|---|
অ/আ + উ/ঊ = ও (ো) | সূর্য + উদয় = সূর্যোদয় | কথা + উপকথন = কথোপকথন |
চল + ঊর্মি = চলোর্মি | মহা + ঊর্মি = মহোমি |
৬. অ/আ, ঋ ধ্বনির সন্ধি
সূত্র | উদাহরণ | |
---|---|---|
অ/আ + ঋ - অর () | দেব + ঋষি = দেবর্ষি | রাজা + ঋষি = রাজর্ষি |
উ + ঊ = উ ( ু) | শীত + ঋত = শীতার্ত | ক্ষুধা + ঋত = ক্ষুধার্ত |
৭. অ/আ, এ/ঐ ধ্বনির সন্ধি
সূত্র | উদাহরণ | |
---|---|---|
অ/আ + এ/ঐ = ঐ (ৈ) | জন + এক = জনৈক | তথা + এব = তথৈব |
মত + ঐক্য = মতৈক্য | মহা + ঐশ্বর্য = মহৈশ্বৰ্য |
৮. অ/আ, ও/ঔ ধ্বনির সন্ধি
সূত্র | উদাহরণ | |
---|---|---|
অ/আ + ও/ ঔ = ঔ (ৌ) | জল + ওকা = জলৌকা | মহা + ওষধি = মহৌষধি |
চিত্ত + ঔদার্য = চিত্তৌদার্য | মহা + ঔষধ = মহৌষধ |
৯. ই/ঈ-এর পর ভিন্ন ধ্বনির সন্ধি
সূত্র | উদাহরণ | |
---|---|---|
ই/ঈ + অ/আ = য (371) | অতি + অন্ত = অত্যন্ত | নদী + অম্বু = নদ্যম্পু |
ইতি + আদি = ইত্যাদি | মসী + আধার = মস্যাধার | |
ই/ঈ + উ/ঊ = য (I/I) | অতি + উক্তি = অত্যুক্তি | প্রতি + ঊষ = প্রত্যূষ |
ই/ঈ + এ = য (63) | প্ৰতি + এক প্রত্যেক |
১০. উ/ঊ-এর পর ভিন্ন ধ্বনির সন্ধি
সূত্র | উদাহরণ | |
---|---|---|
উ/ঊ + অ/আ = ব/বা | সু + অল্প = স্বল্প | সু + আগত = স্বাগত |
উ/ঊ + ই/ঈ = বি/বী | অনু + ইত = অন্বিত | তনু + ঈ = তন্বী |
উ/ঊ + এ = বে | অনু + এষণ =অন্বেষণ |
১১. এ/ঐ-এর পর ভিন্ন ধ্বনির সন্ধি
সূত্র | উদাহরণ | |
---|---|---|
এ/ঐ + অ/আ = অয়/ আয় | নে + অন = নয়ন | নৈ + অক = নায়ক |
১২.ও/ঔ-এর পর ভিন্ন ধ্বনির সন্ধি
সূত্র | উদাহরণ | |
---|---|---|
ও/ঔ + অ/আ = অব/আব | পো + অন = পবন | গো + আদি = গবাদি |
লো + অন = লবণ | পৌ + অক = পাবক | |
ও/ঔ + ই = অবি/আবি | পো + ইত্ৰ পবিত্র | নৌ + ইক নাবিক |
ও/ঔ + উ = আবু | ভৌ + উক = ভাবুক | |
ও/ঔ + এ = অবে | গো + এষণা = গবেষণা |
১. স্বরধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনির সন্ধি
অ + ছ = চ্ছ | প্র + ছদ = প্রচ্ছদ |
আ + ছ =চ্ছ | জল + আশয় = জলাশয় |
ই + ছ = চ্ছ | পরি + ছদ = পরিচ্ছদ |
উ + ছ = চ্ছ | তরু + ছায়া = তরুচ্ছায়া |
২. ব্যঞ্জনধ্বনি + স্বরধ্বনির সন্ধি
ক + অ = গ | দিক্ + অন্ত = দিগন্ত |
ট + আ = ড> ড় | ষট্ + আনন = ষড়ানন |
ত + অ = দ | তৎ + অন্ত = তদন্ত |
প + অ = ব | সুপ্ + অন্ত সুবন্ত |
৩. ব্যঞ্জনধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনির সন্ধি
ত + চ/ছ = চ্চ/চ্ছ | উৎ + চারণ = উচ্চারণ | উৎ + ছেদ = উচ্ছেদ |
দ + চ/ছ = চ্চ /চ্ছ | বিপদ্ + চয় = বিপচ্চয় | বিপদ্ + ছায়া = বিপচ্ছায়া |
ত + জ/ঝ = জ্ঞ/স্ক | যাবৎ + জীবন = যাবজ্জীবন | কুৎ + ঝটিকা = কুঞ্ঝটিকা |
দ + জ = জ্জ | বিপদ্ + জনক = বিপজ্জনক | |
ত + ড = ড | উৎ + ডীন = উড্ডীন | |
ত + ল = ম্ল | উৎ + লিখিত = উল্লিখিত | |
ত + শ = চ্ছ | চলৎ + শক্তি = চলচ্ছক্তি | |
ত + হ = দ্ধ | তৎ + হিত = তদ্ধিত | |
দ + হ = দ্ধ | পদ্ + হতি = পদ্ধতি | |
ক্ + দ = গ্ + দ | বাক্ + দান = বাগ্দান | |
ক্ + ব = গ + ব | দিক্ + বিজয় = দিগ্বিজয় | |
ট্ + য = ঙ্ ড্ + য | ষট্ + যন্ত্র = ষড়যন্ত্র | |
ত্ + গ = দৃ + গ | উৎ + গিরণ = উদ্গিরণ | |
ত্ + ঘ = দ্ + ঘ | উৎ + ঘাটন = উদ্ঘাটন | |
ত্ + ব = দ্ +ব | উৎ + বন্ধন = উদ্বন্ধন | |
ত্ + ভ = দ্ + ভ | উৎ + ভব = উদ্ভব | |
ত্ +র = দৃ + র | তৎ + রূপ = তদ্রূপ | |
ক্ + ন = ঙ + ন | দিক্ + নির্ণয় = দিনিৰ্ণয় | |
ত্ + ম = ন + ম | তৎ + মধ্যে = তন্মধ্যে | |
ত্ + ন = ন্ন | উৎ + নতি উন্নতি | জগৎ + নাথ = জগন্নাথ |
ত্ + ম = ন্ম | তৎ + ময় = তন্ময় | মৃৎ + ময় = মৃন্ময় |
ম্ + ক = ঙ/ং + ক | শম্ + কা = শঙ্কা | সম্ + কীৰ্ণ = সংকীর্ণ |
ম্ + খ = ং + খ | সম্ + খ্যা = সংখ্যা | |
ম্ + গ = ং + গ | সম্ + গীত = সংগীত | |
ম্ + ঘ = ং + ঘ | সম্ + ঘাত = সংঘাত | |
ম্ + চ = ঞ্চ | সম্ + চয় = সঞ্চয় | |
ম্ + ত = ন্ত | সম্ + তাপ = সন্তাপ | |
ম্ + দ = ন্দ | সম্ + দর্শন = সন্দর্শন | |
ম্ + ধ = ধ | সম্ + ধান = সন্ধান | |
ম্ + ন = ন্ন | কিম্ + নর = কিন্নর | |
ম্ + য = ং + য | সম্ + যম = সংযম | |
ম্ +র = ং + র | সম্ + রক্ষণ = সংরক্ষণ | |
ম্ + শ = ং + শ | সম্ + শয় = সংশয় | |
ম্ + হ = ং+হ | সম্ + হার = সংহার |
বিসর্গ (ঃ )-এর সঙ্গে স্বরধ্বনি কিংবা ব্যঞ্জনধ্বনির যে সন্ধি হয়, তাকে বিসর্গসন্ধি বলে। উচ্চারণের দিক থেকে বিসর্গ দু রকম :
১. র্-জাত বিসর্গ : শব্দের শেষে র্ থাকলে উচ্চারণের সময় র্ লোপ পায় এবং র্-এর জায়গায় বিসর্গ (ঃ) হয়। উচ্চারণে র্ বজায় থাকে। যেমন : অন্তর > অন্তঃ + গত = অন্তর্গত (অতোগতো)।
৬. স্-জাত বিসর্গ : শব্দের শেষে স্ থাকলে সন্ধির সময় স্ লোপ পায় এবং স্-এর জায়গায় বিসর্গ ( ঃ ) হয়। উচ্চারণে স্ বজায় থাকে। যেমন : নমস্ > নমঃ + কার নমস্কার ( নমোকার্ )।
বিসর্গসন্ধি দু-ভাবে সাধিত হয় :
১. বিসর্গ ( ঃ ) ও স্বরধ্বনি মিলে
২. বিসর্গ ( ঃ ) ও ব্যঞ্জনধ্বনি মিলে।
১. বিসর্গ ও স্বরধ্বনির সন্ধি
ক. অ-ধ্বনির সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে অ-ধ্বনি থাকলে বিসর্গ ও অ-ধ্বনি স্থলে ও-কার হয়। যেমন :
ততঃ + অধিক = ততোধিক যশঃ + অভিলাষ = যশোভিলাষ
বয়ঃ + অধিক = বয়োধিক
খ. অ-ধ্বনির সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে অ, আ, উ-ধ্বনি থাকলে বিসর্গ ও অ-ধ্বনি মিলে র হয়। যেমন :
পুনঃ + অধিকার = পুনরধিকার প্রাতঃ + আশ = প্রাতরাশ
পুনঃ + আবৃত্তি = পুনরাবৃত্তি পুনঃ + উক্ত = পুনরুক্ত
২. বিসর্গ ও ব্যঞ্জনধ্বনির সন্ধি
ক. অ-ধ্বনির সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে বর্গের ৩য়/ ৪র্থ/ ৫ম ধ্বনি অথবা য, র, ল, হ থাকলে বিসর্গ ও অ-ধ্বনি স্থলে র-জাত বিসর্গে র/ রেফ (^) এবং স-জাত বিসর্গে ও-কার হয়। যেমন :
র-জাত বিসর্গ : র
অন্তঃ + গত = অন্তর্গত | পুনঃ + জন্ম = পুনর্জন্ম |
অন্তঃ + ধান = অন্তৰ্ধান | পুনঃ + বার = পুনর্বার |
অন্তঃ + ভুক্ত = অন্তর্ভুক্ত | পুনঃ + মিলন = পুনর্মিলন |
স-জাত বিসর্গ : ও
ক.
মনঃ + গত = মনোগত | সদ্যঃ + জাত সদ্যোজাত |
তিরঃ + ধান = তিরোধান | তপঃ + বন = তপোবন |
অধঃ + মুখ = অধোমুখ | মনঃ + যোগ = মনোযোগ |
মনঃ + রম = মনোরম | মনঃ + লোভা = মনোলোভা |
মনঃ + হর = মনোহর |
খ. বিসর্গের পরে চ/ছ থাকলে বিসর্গের স্থলে শ; ট/ঠ থাকলে ষ এবং ত/থ থাকলে স হয়। যেমন :
নিঃ + চয় = নিশ্চয় | শিরঃ + ছেদ = শিরশ্ছেদ |
দুঃ + চরিত্র = দুশ্চরিত্র | নিঃ + ছিদ্র = নিশ্ছিদ্র |
ধনুঃ + টঙ্কার = ধনুষ্টঙ্কার | নিঃ + ঠুর = নিষ্ঠুর |
চতুঃ + টয় = চতুষ্টয় | |
দুঃ + তর = দুস্তর | নিঃ + তেজ = নিস্তেজ |
ইতঃ + তত = ইতস্তত | দুঃ + থ = দুস্থ |
গ. অ/আ ভিন্ন অন্য স্বরের সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে স্বরধ্বনি, বর্গের ৩য় / ৪র্থ / ৫ম ধ্বনি অথবা য, র, ল, হ থাকলে বিসর্গ স্থলে র হয়। যেমন :
নিঃ + অবধি = নিরবধি | নিঃ + আপদ |
নিঃ + গত = নির্গত | নিঃ + ঘণ্ট - নির্ঘণ্ট |
নিঃ + বাক্ = নির্বাক | নিঃ + ভয় = নির্ভয় |
আবিঃ + ভাব = আবির্ভাব | আশীঃ + বাদ = আশীর্বাদ |
দুঃ + অবস্থা = দুরবস্থা | দুঃ + আচার দুরাচার |
দুঃ + গতি = দুর্গতি | দুঃ + বোধ = দুর্বোধ |
প্রাদুঃ + ভাব = প্রাদুর্ভাব | দুঃ + মর = দুর্মর |
দুঃ + যোগ = দুর্যোগ | দুঃ + লভ = দুর্লভ |
ঘ. র-জাত বিসর্গের পরে র থাকলে বিসর্গ লোপ পায় এবং প্রথম স্বর দীর্ঘ হয়। যেমন :
নিঃ + রব = নীরব | নিঃ + রস = নীরস |
নিঃ + রোগ = নীরোগ |
ঙ. অ/আ ধ্বনির সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে ক, খ, প, ফ থাকলে বিসর্গ স্থলে স হয়। যেমন :
নমঃ + কার = নমস্কার | তিরঃ + কার = তিরস্কার |
পুরঃ + কার = | ভাঃ + কর = ভাস্কর |
চ. ই/উ ধ্বনির সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে ক, খ, প, ফ থাকলে বিসর্গ স্থলে ষ হয়। যেমন :
নিঃ + কাম = নিষ্কাম | নিঃ + পাপ = নিষ্পাপ |
নিঃ + ফল = নিষ্ফল | বহিঃ + কার = : বহিষ্কার |
চতুঃ + পদ = চতুষ্পদ | চতুঃ + কোণ = চতুষ্কোণ |
আবিঃ + কার = আবিষ্কার | দুঃ + পাচ্য = দুষ্পাচ্য |
ছ. কোনো কোনো ক্ষেত্রে সন্ধির বিসর্গ লোপ পায় না। যেমন :
প্রাতঃ + কাল প্রাতঃকাল | মনঃ + কষ্ট = মনঃকষ্ট |
শিরঃ + পীড়া = শিরঃপীড়া | অন্তঃ + করণ অন্তঃকরণ |
জ. কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিসর্গ লোপ পেলেও সন্ধি হয় না। যেমন :
অতঃ + এর = অতএব |
বিসর্গ সন্ধির কিছু ব্যতিক্রম :
অহঃ + অহ = অহরহ | অহঃ + নিশা= অহর্নিশ |
১. সতী ঈশ বাবু মাধ্যমিক বিদ্যা আলয়ের শিক্ষক। তার অহম্ কার নেই, তিনি সম্ গীত ভালোবাসেন । — উদ্ধৃতাংশে মোটা দাগ দেয়া শব্দগুলোর সন্ধি কর। তোমার পছন্দমতো এ রকম আরও কয়েকটি শব্দের বাক্য লেখ।
২. তুমি আজ সারা দিন যাদের কথাবার্তা শুনেছ, সেসব কথার মধ্যে থেকে মনে করে ১০টি সন্ধিবদ্ধ শব্দ বের কর। তারপর সেগুলোকে আলাদা করে কোন প্রকার সন্ধি তা লেখ। যেমন: তোমার বাবা বললেন, “দোকান থেকে পাশসের আলু, গোটা পাঁচেক কাঁচকলা আর এক কৌটা গব্যঘৃত নিয়ে এস তাড়াতাড়ি। দেখ, যেন বেশকম না হয়। ” এখানে সন্ধিবদ্ধ শব্দগুলো হচ্ছে—
পাঁশসের, পাঁচেক, কাঁচকলা, গব্য, বেশকম।
পাঁশসের = পাঁচ + সের = ব্যঞ্জনসন্ধি
পাঁচেক = পাঁচ + এক = ব্যঞ্জনসন্ধি
কাঁচকলা = কাঁচা + কলা = ব্যঞ্জনসন্ধি
গব্য = গো + য = ব্যঞ্জনসন্ধি
বেশকম = বেশি + কম = ব্যঞ্জনসন্ধি
৩. বহিষ্কার, আবিষ্কার, নমস্কার, পুরস্কার শব্দগুলো সন্ধির কোন নিয়ম মেনে গঠিত হয়েছে ? নিয়মগুলো লেখ এবং সে নিয়ম অনুযায়ী তোমার পাঠ্য বই থেকে আরও কয়েকটি শব্দ খুঁজে নিয়ে একটি তালিকা তৈরি কর।
আরও দেখুন...